হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের নাম ও বর্ণনা

নবীদের সর্দার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বশেষ গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা নবীজির স্ত্রীদের বিশেষ সম্মান এবং মর্যাদা দান করেছেন। মা খাদিজার মৃত্যুর পর রাসূল ( সা: ) পরে ১০ জনকে ( মতান্তরে ১২ জন, আবার অনেকে এটাকে ১১ এবং মতান্তরে ১৩ উল্লেখ করে ) নারীকে বিয়ে করেছেন।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের নাম

  1. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
  2. সাওদা বিনতে জামআ
  3. আয়েশা বিনতে আবু বকর
  4. হাফসা বিনতে উমর
  5. জয়নব বিনতে খুযায়মা
  6. উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া
  7. রায়হানা বিনতে জায়েদ
  8. জয়নব বিনতে জাহশ
  9. জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস
  10. রামহাল ( উম্মে হাবীবা) বিনতে আবু সুফিয়ান
  11. সাফিয়া বিনতে হুইয়াই
  12. মাইমুনা বিনতে আল হারিস
  13. মারিয়া আল কিবতিয়া

খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ : বিবাহকালে রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ২৫ ও তাঁর বয়স ৪০; মৃত্যুসন- রামাযান ১০ম নববী বর্ষ; দাফন- মক্কার ‘হাজূনে’; মৃত্যুকালে বয়স ৬৫। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে তাঁর দাম্পত্যকাল- ২৪ বছর ৬ মাস বা প্রায় ২৫ বছর। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (ছাঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।

সাওদা বিনতে জামআ: হযরত সাওদা (রাঃ)-এর পিতার নাম যাম’আ ইবনে কায়েশ। আর মাতার নাম শমুস ইবনে কায়েশ। চাচাত ভাই সাকরান ইবনে আমর এর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। সাকরান এবং সাওদা (রাঃ) একই সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হযরতের খেদমতে হাজির হন।

এবং বলেন, আপনার জন্য বিবাহ ঠিক করি। হযরত নবী করীম (সাঃ) তা মঞ্জুর করলে সাওদা (রাঃ) কে শুসংবাদ শুনান। সাওদা (রাঃ) রাজি হন এবং বলেন আমার পিতা মাতাকে জিজ্ঞেস করে নিব। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর নবুওয়তের দশম সালে তাঁর পিতা যাম’আ ৪০০ দিরহাম মহরের বিনিময়ে বিবাহ পড়ান।

আয়েশা বিনতে আবু বকর: নবীর তৃতীয় স্ত্রী হলো আয়েশা বিনতে আবু বকর। তার পিতা হযরত আবু বকর রা: ছিলেন নবী সা: এর একজন ঘনিষ্ট এবং বিশ্বস্ত সাহাবী। মা আয়েশা রা: ইসলামে অবদান রয়েছে অনেক। তার ঐতিহাসিক অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নবী সা: কে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাইতো আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

হাফসা বিনতে উমর: মা হাফসা (রাঃ) ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা ও প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর মেয়ে। তিনি প্রথমে হুনাইস ইবনে হুজাইফাকে বিয়ে করেন ও পরে বিধবা হন। ইদ্দত শেষ হবার পর পিতা ওমর (রাঃ) প্রথমে হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) ও পরে হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ) কে হাফসা (রাঃ) কে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।

এই দুই সাহাবী প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তখন বাবা ওমর নবী মুহাম্মদ (সাঃ)কে বিয়ের প্রস্তাব দিলে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তিনি হাফসাকে বিয়ে করেন। 

জয়নব বিনতে খুযায়মা: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৫; তাঁর বয়স প্রায় ৩০; বিবাহ সন ৩ হিজরী; মৃত্যুসন ৩ হি., বয়স ৩০; দাফন- মদীনা; দাম্পত্য জীবন ২ অথবা ৩ মাস। অধিক দানশীল ও গরীবের দরদী হিসাবে তিনি ‘উম্মুল মাসাকীন’ বা ‘মিসকীনদের মা’ নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি কোন হাদীছ বর্ণনা করেননি।

উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া: হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) অতি শরীফ বংশের মহিলা ছিলেন। তখনকার দিনেও তাঁর বংশের মেয়েরা একা রাস্তায় বের হতো না। চাচাত ভাই আবু সালমা ইবনে আব্দুল আসাদের সাথে তাঁর প্রথম বিবাহ হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা ইসলাম গ্রহন করেন তিনি এবং তার স্বামী তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। ওহুদের যুদ্ধে তাঁর স্বামী শহীদ হন। উম্মে সালমা (রাঃ) স্বামী মৃত্যুর সময় ওনার সন্তান ছিল মোট ৪জন।এমতোবস্থায় তিনি খুবই বিপর্যস্ত এবং অসহায় অবস্থায় পড়ে যান। এমন পরিস্থিতি থেকে তাকে রক্ষা করতে হযরত মুহাম্মদ সা: মা উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া রা: কে বিয়ে করেন।

রায়হানা বিনতে জায়েদ: রায়হানা (রাঃ) তিনি ছিলেন বনু নাযির গোত্রের একজন ইহুদি নারী। যখনই উনি ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন নবী সা: মা হযরত রায়হানা বিনতে জায়েদ কে বিবাহ করেন। তিনি খুব সুন্দর ও সাবলীল ভাবে ইসলাম পালন করেছেন। 

জয়নব বিনতে জাহশ: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৭; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ সন ৫হি. মৃত্যুসন ২০হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৫১ বছর। দাম্পত্য জীবন- ৬ বছর। রাসুল (সা.)এর ফুফাতো বোন ছিলেন। তিনি মোট ১১টি হাদীছ বর্ণনা করেন। 

জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস: তিনি ছিলেন আরবের বনু মুস্তালিক গোত্রের প্রধানের মেয়ে। বনু মুস্তালিক গোত্রের প্রধান ছিলেন আল হারিস ইবনে আবি দিয়ার। তার কণ্যাই হলো মা জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস। ৫ হিজরি সনে রাসূল সা: জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস কে বিবাহ করেন।

রামহাল ( উম্মে হাবীবা) বিনতে আবু সুফিয়ান: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৮; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ মুহাররম ৭হি.; মৃত্যু সন- ৪৪হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭২। দাম্পত্য জীবন- ৪ বছর। কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। তিনি ৬৫টি হাদীছ বর্ণনা করেন।

সাফিয়া বিনতে হুইয়াই: খয়বরের যুদ্ধে তাঁর দ্বিতীয় স্বামী নিহত হয়। যুদ্ধে গনীমতের মাল হিসেবে হযরত ছুফিয়া বন্দী হয়ে আসেন। দেহয়ে কালবী নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে এসে বলেন, আমার একজন দাসীর প্রয়োজন এবং ছুফিয়াকে। মান মর্যাদার বিচারে ছুফিয়া ছিলেন অনেক উর্দ্ধে । তাই ছাহাবাদের পরামর্শক্রমে নবী করীম (সাঃ) তাঁকে বিয়ে করতে মনস্থ করেন । তিনি দেহয়েকে অন্য দাসী দিয়ে ছুফিয়াকে মুক্ত করে বিয়ে করেন।

মাইমুনা বিনতে আল হারিস: তিনার পিতার নাম হারেস এবং মাতার নাম হিন্দ। মাসউদ ইবনে উমাইর সাথে তাঁর প্রথম বিবাহ হয়। মাসউদ ইবনে উমাইর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আবু রেহেম ইবনে ওসযার সাথে তার বিয়ে হয়। হিজরী ৭ম সালে আবু রেহেম ইন্তেকাল করলে নবী করীম (সাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন। 

মারিয়া আল কিবতিয়া: মারিয়া বিনতে শাম’উন তিনি মারিয়া আল-কিবতীয়া নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন মিশরীয় খৃষ্টান নারী ও কৃতদাসী ছিলেন। তৎকালীন আলেক্সান্দ্রীয় কিবতীয় অর্থডক্স রাজ্যপাল মুকওকিস তাঁকে ও তাঁর বোন সিরিন বিনতে শামউনকে রাসূলের (সাঃ) নিকট উপহার স্বরূপ প্রেরণ করেন। হযরত মারিয়া (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করলে রাসূল (সাঃ) তাকে বিবাহ করেন। 

উম্মুল মুমিনিনদের নাম গুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি নাম আপনার শিশু মেয়ের জন্য চয়ণ করুন।

আরো পড়ুনঃ (দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি ও দোয়া)

Leave a Comment