বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। প্রিয় নবীর পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের ইবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ তাহাজ্জুদ।
কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা এই নামাজের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত আবশ্যক এবং ফরজ নামাজের বাহিরে যদি অন্য কোন মর্যাদাসম্পন্ন ও ফযিলতপূর্ণ নামাজ থাকে সেটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা। অতঃপর ছানা পড়া। সুরা ফাতেহা পড়া। সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজে কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত
রাসুলুল্লাহ (স.) তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো চার রাকাত, কখনো আট রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছেন। কিন্তু কেউ যদি এ নামাজ দুই রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) অধিকাংশ সময় ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটি আবশ্যক নয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন তাহাজ্জুদ নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল? নফল শব্দের অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত। নফল নামাজ পড়লে আপনার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে।
ফরজ নামাজে যদি কোন ত্রুটি থাকে তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলেন দেখো এর কাছে কোন নফল নামাজ আছে কি না।তাই ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
আর সুন্নত হচ্ছে যে আমল নবী করীম (সাঃ) করেছেন বা কোরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করীম (সাঃ) নিজে পড়েছেন এবং পড়তে উৎসাহিত করেছেন তাই এটি সুন্নত। একইসঙ্গে এটি নফল ও বলা যায়।
কারণ এই নামাজ আদায় করতে না পারলে আপনার গুনাহ হবে না। এটি আপনার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اسَلَى رَكَعَتِى التَّهَجُّدَ

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
নাওয়াইতু আনউসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিত্তাহাজ্জুূদী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
তাহাজ্জুদের নামাজ যেকোনো সূরা দিয়েই আদায় করতে পারবেন এখানে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই – তবে প্রিয়নবী (স.) যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদার সঙ্গে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুন (জানাজার নামাজের নিয়ম ২০২৩)
1 thought on “তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম ২০২৩”